Wednesday 6 March 2013

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমিও চাই, তবে... (১)


 ১
প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে পাশ করা মৌরি নাজনিন কলা খায় না, বাঙ্গি খায় না, বড়ই খায় না, পেয়ারা খায় না, চা খায় না। তার প্রিয় ফল স্ট্রবেরী, প্রিয় পানীয় কফি। স্ট্রবেরীর স্বাদ ভালো না, টক টক লাগে এহেন কথা বলা হলে তিনি ষাঁড়ের মতো তেড়ে আসেন মারতে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্রেন ছাড়বে অথচ তিনি কমলাপুর এসে বসে থাকেন, উপায়ন্তর না দেখে অবিবাহিত রেল কর্মকতাকে সাত সকালে ফোন করে ট্রেন ১০ মিনিট থামিয়ে রাখার অনুরোধ করেন। তিনি সাড়ে ৪০ কেজি কসমেটিক্স নিয়ে ঢাকা থেকে নরসিংদী গিয়েছেন বন্ধুর বিয়েতে।

দিগন্ত বাহার তরুন সমাজের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর
, যুক্তিবাদী ও সুদর্শন পুরুষ। আমাকে একবার অনুরোধ করিলেন তার মাথা ম্যাসাজ করে দিতে। আমি সাত- পাঁচ না ভেবে মাথা ম্যাসাজ করে দিলাম। কোন মানুষের চুলে এত দুর্গন্ধ হয়ে পারে আমার কল্পনায় ছিল না
কস্কো সাবান, হ্যান্ড সোপ দিয়ে হাত ডললাম কয়েকবার। ফলাফল শুন্য।

জাকিয়া সুলতানা আমার ফুপি। ১১ বছর প্রেম করে সফলতার সাথে বিবাহ করেছেন প্রেমিককে। যেখানেই যাওয়া হোক তার ছোট টয়লেট পায়
, ঝিনাইদাহ এর বাওড়ে নৌকা ভ্রমণে উঠে তার প্রথম বাক্য- আমার খুব চেপেছে। তিনি চিংড়ি মাছ ভেবে মাওয়া ফেরীতে আরশোলা চিবিয়ে খান, তার কোন ভাবান্তর হয়না।

আশিক ভাই পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এবং সম্পর্কে আমার ফুপা বনেছেন। আমার অবিবাহিত ফুপিকে তথা তার অবিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় বেল্লেলাপনা করেছেন। হলুদের মঞ্চে বসে বাসর রাতে বউকে শোনাবার জন্য কবিতা মুখস্থ করেছেন। হবু বউয়ের বিয়ের শাড়ি বালিশের নীচে রেখে ঘুমিয়েছেন।

আমিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই
, কিন্তু ফাঁশি হলেই কি মৌরি নাজনিন প্রাইভেট ভার্সিটি ইগো ছেড়ে কলা,পেয়রা, বড়ই খাওয়া শুরু করবেন? দিগন্ত বাহার গোসল তথা চুলে এক আধটু শ্যাম্পু দেবেন? জাকিয়া ফুপির ছোট টয়লেট পাওয়া বন্ধ হবে? আশিক ভাইর অবিবাহিত স্ত্রী নিয়ে নির্লজ্জতা করা বন্ধ হবে?


 


সাজ্জাদ ভাই বারডেমের ইন্টার্ন। তিনি ডিউটি তো করেনই না
, বরং ছাত্র লীগের সহ সভাপতির রুমে বসে লাড্ডুতে কামড় দিতে দিতে প্রফেসরকে ফোন করে জানান সকল রোগির অবস্থা ভালো। তিনি দায়িত্ব নিয়ে ডিউটি দিচ্ছেন।
জন্মদিনের সন্ধ্যায় আমি ছোট ভাই হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমার টাকায় চা- সিগারেট- ডালপুরি খেতে খেতে বলেন- হামীম ডাক্তারি করা অনেক কঠিন।

আলী ইমরান ভাই পেশীশক্তি তথা রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে হলের খাবার রুমে আনিয়ে খান, দোকান থেকে লাড্ডু, মিষ্টি, কোলা, দধি মিষ্টি বাকিতে আনিয়ে খাওয়ান। আর আমাকে বলেন- হামীম, আজ যদি স্মুথ না হয়েছে তোরে আমি খাইছি।

জাহিদ ভাই বিমানবাহিনীর সোর্ড পাওয়া ক্যাডেট
, প্রচণ্ড অলসতার কারণে এখন স্কলাস্টিকায় মাস্টারি করেন। পুঁজিবাদে পচে যাওয়া এই মাস্টার আগামী দুই বছরের মাথায় এপার্টমেন্ট কেনার প্লান করেছেন। এত টাকা কোথা থেকে আসে?

রায়হান আবীর একটি কালো মুক্তা। তিনি ম্যাচের পর ম্যাচ ফুটবল খেলায় হেরে ল্যাপ্টপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলেন
কিভাবে পারো?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর হলের পাশের রাস্তা আবর্জনায় উপচে পরছে, পেশাবের গন্ধে শ্বাস নেয়া দায়। রায়হান আবির বলেন- হামীম এত পরিষ্কার রাস্তা ময়লা করতে অনেক খারাপ লাগছে, বিড়ির খালি প্যাকেটটা পকেটে রেখে দে, রাস্তায় ফেলিস না।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার আমিও চাই
, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর বিচার হলেই কি সাজ্জাদ ভাই ঠিক ঠাক মতন ডিউটি করবেন? আলি ইমরান ভাই রাজনৈতিক শক্তির অপব্যবহার বন্ধ করবেন? জাহিদ ভাইয়ের কালো টাকার উৎস বের হবে? রায়হান আবির ভাই সজ্ঞানে ফিরে আসবেন?


মাহমুদুল হাসান রাব্বী, মেধাবী ছাত্র। তার বিশাল বপু দেখলেই আমার গরম লাগা শুরু হয়, কুকুরী বাচ্চা দেবার পর হাটার সময় তার ওলানগুলো যেমন পেন্ডুলামের মতো এদিক অইদিক ঝোলে রাব্বির ভুড়িও সেই রকম ঝোলে। বিশাল সঙ্খক লাইক পাবার পর শোনা যায় ছবির মেয়েটি তার সাথে প্রেম করতে রাজি হয়নি। প্রেমে ব্যর্থ রাব্বী এখন মডেল বিয়ে প্লাস কস্টিং করার ধান্ধায় দিন কাটায়।

আবির মজুমদার
, মুক্তিযোদ্ধা পুত্র। অতি সুদর্শন পুরুষ বিশেষ। সে জার্মানী গিয়ে জনৈক মেয়ের সাথে বিশাল ফষ্টি নস্টি করে এসেছে। সেই মেয়ের ড্রাইভারের কাছে আবির মজুমদারকে একটি প্যাকেট গছিয়ে দিতে দেখা যায়, আবির বলে উহা গ্রিন টি, আমার বিশ্বাস উহা জার্মানীতে চুরি করা রমনীর ব্রা ও প্যান্টি। ক্যারিয়ার গড়তে চাওএই ধরনের লোভ দেখিয়ে মেয়েদের শরীর হাতানোর স্বভাব তার দীর্ঘদিনের।

খায়রুল আনাম শিহাব ওরফে ব্যাটম্যান। ক্ষীণকায় এই পুরুষ একজন নারীলিপ্সু প্রকৌশলী। আশে পাশের সকল মেয়েদের দিকে শ্যনদৃষ্টি পাতের জন্য সে বহুল সমালোচিত। সারা শরীরে মাসল নেই
, কিন্তু তার ডান হাতের বাইসেপ ফুলে ওঠার কারণ কাউকে আর বুঝিয়ে দিতে হয় না।

আসিফ আল হাই
, বুয়েট ইইই এর মেধাবী ছাত্র ও দীর্ঘকায়। বুয়েট বিপ্লবের পর হতাশাগ্রস্ত এই তরুন এই এখন আসল কচি ডাব খাবার খাবার টিপস বিলিয়ে বেড়ায় ফেসবুকে। কাজাকিস্তান থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত মেয়ে পটানোর ধান্ধা করে বেড়ায়।

আশিকুর রহমান সামি, ফটোগ্রাফার ওরফে লুল। লম্বা মেশিন নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে মেয়েদের মুখের খোমা তুলে বেড়ানোই যার একমাত্র কাজ। ফেসবুক লিস্টের মেয়েদের সহসাই দেখা যায় সামির প্রোফাইলের ছবিতে, উপরে চিকা- রাইটস রিজার্ভড বাই আশিকুর রহমান সামি।

কাকের চেয়ে কবি দেশে অনেক বেশি থাকলেও, কাকের মতো কালো কবি একটিই। তিনি রিয়াজ হক তন্ময়। সদা হাসিখুশি এই কবি জনৈক মেয়েকে ইনবক্সে চল্কেট দিয়ে গোসল করাতে চাওয়ার কারণে বিখ্যাত। মিস ফরিদপুর খ্যাত সাবা রহমানের সাথে মন দেওয়া নেওয়ার পর কবি আমাদের সবাইকে ভুলে গেছেন, আমরা বলতে চাই – চল্কেট দিয়ে গোসল করানো এখনও হয়নি শেষ, ফিরে আসো আমাদের মাঝে তুমি কবি।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার আমিও চাই কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর বিচার হলেই কি রাব্বির কস্টিং এর হিসাব করা বন্ধ হবে? আবিরের ব্রা প্যান্টি চুরি করা বন্ধ হবে? আসিফ আবার বিপ্লবী হবে? সামির ক্যামেরায় উঠে আসবে পতাকা, পাখি, ফুল? ইনবক্সে বন্ধ হবে কালো কবি তন্ময়ের চকলেটে গোসল করাবার আহবান?




বলাকা সিনেমা হলের দোতালায় দাঁড়িয়ে এক রমণী বলেছিল – আমার চোখের দিকে তাকান আমি ট্যারা না। ট্যারা কিনা লক্ষ করা হয়নি, তবে চোখ ছিল তার মায়াবতী।

বলেছিল কেউ –তুমি দিনকে দিন বখাটে হয়ে যাচ্ছ, বলব না আমি কথা বখাটে ছেলের সাথে।
কেউ বা বলেছিল- আমার সাথে দেখা করে কি হবে? আমি তো রাবারের মতো পায়জামা( লেগিংস) পরি না, যারা পরে তাদের সাথে গিয়ে দেখা করেন।

হিজাবী কোন মেয়ের সাথে পরিচিত হবার ইচ্ছা ছিল বহুদিনের, প্রেমা আপুর গেট টুগেদারে হয়েই গেল পরিচিতি পর্ব, খুব এক্সপ্রেশন দিয়ে বলছি তখন কথা, বিশ্লেষণ করছি মানব দেহের একমাত্র নিউক্লিয়াস বিহীন কোষের কথা, প্রেমা আপু হুট করে এসে বললেন- এই হারামজাদা তুই কি ওর সাথে টাঙ্কি মারার চেষ্টা করছিস। আমার ইজ্জত আর শত ছিদ্রর কনডমের মাঝে কোন পার্থক্য রইল না।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার আমিও চাই, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর বিচার হলেই কি কোন রূপবতী লক্ষ্মী ট্যারা হয়ে যাবে? আমাকে বখাটে বলা বন্ধ হবে? রাবারের মতো পায়জামা পরা চালু হবে? প্রেমা আপুর হাতে আমার ইজ্জতের ডিসমিস হওয়া বন্ধ হবে?




মাহবুবুর রহমান অমি রাজনীতির বলির শিকার হয়ে এখন মেসে থাকে। আমতলী এলাকার লীগ হাতে থাকা সত্ত্বেও হলে পোষাতে পারছে না। সে বাসায় এসে ঘুম থেকে আমাকে তুলে বলল – তোর শাদা হাফ প্যান্টটা দে, কুয়াকাটা যাবো। দিয়ে দিলাম আর ফেরত পাইনি কোনদিন।

সন্দিপ্তা সাদিক, প্রানে ভরা একটি প্রান। সারাক্ষন হুটোপুটি চিৎকার চেঁচামেচি। তাকে তার লাভার কাম বস একটি সনি এক্সপেরিয়া সেল ফোন গিফট করেছে, সে এখন সবাইকে এই কথা বলে বেড়িয়ে জেলাস করে তুলছে সবাইকে।

রাইসা হোসেন অসম্ভব রূপবতী হলেও বা কি, আকামের আট্টা, সামান্য সালাদ কাটতে পারে না। তার প্রতি ধিক্কার।

নাভেদ ফেরদৌস এখন থেকেই বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে, বিসিএস পাশ করলে নাকি তার লোক প্রশাসন পড়ুয়া আজন্ম প্রেম তাকে বিয়ে করার জন্য বাসায় ফাইট দেবে। সে নিয়মিত ক্রিকেট খেলায় শুন্য করে ডিপার্টমেন্ট এর চোখের বালি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার আমিও চাই, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর বিচার হলেই কি অমি আমার হাফ প্যান্ট ফেরত দিয়ে যাবে? সন্দিপ্তা তার এক্সপেরিয়া আমকে দিয়ে দেবে? রাইসা সালাদ কাটা শিখে যাবে? নাভেল সেঞ্চুরি করবে?

( চলবে)